জেনে নিন রোগ প্রতিরোধে রোজার গুরুত্ব।

স্বাস্থ্য প্রতিবেদন,সকালের কন্ঠঃ

রোজা মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। শুধু পরকালেই নয়, ইহকালেও রোজার অনেক ফযিলত রয়েছে। শরিয়তে উল্লেখিত অনেক উপকারীতার মধ্যে শারীরিক সুস্থতাও অন্যতম। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও শারীরিক সুস্থতায় রোজার গুরুত্ব একবাক্যে মেনে নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। সামান্য অসুস্থতার কারণে অনেকেই রোজা পরিত্যাগ করেন। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে রোজা রাখলে অসুস্থ নয়, বরং অসুস্থতা দূর করে রোগীকে সুস্থ করে তুলে।

‘সাওম’ এক বচন। এটি আরবি শব্দ। এর বহুবচন ‘সিয়াম’৷ এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা৷ ‘রোজা’ ফারসি শব্দ৷ যা ‘রোজ’ বা দিন থেকে এসেছে, অর্থাৎ দিনে বিরত থাকা৷ 

রোজা রাখার নিয়ম সবযুগেই প্রচলিত ছিল৷ ইয়াহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, মুসলমান সব ধর্মেই fasting বা রোজার প্রচলন আছে এবং ছিল। যদিও ধরন ও প্রক্রিয়াগত ভাবে মুসলমানদের রোজা অন্যদের থেকে ভিন্নতর৷

শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার ও জৈবিক প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলে৷ 

রোজা রাখার বহুমাত্রিক উপকারিতার মধ্যে শারীরিক সুস্থতা, চারিত্রিক মহত্ত্বতা, নৈতিক পরিচ্ছন্নতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, আত্মিক পবিত্রতা ও সামাজিক বন্ধন অক্ষুন্নতা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য৷

এখানে আমরা শারীরিক সুস্থতা বিষয়ে অল্প কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো৷

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী শারীরিক সুস্থতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য দৈনিক নূন্যতম তিনবার পানাহার অত্যাবশ্যকীয়৷ এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে অনেকেই সাধারণ চাপ বা সাধারণ অসুস্থতায় রোজা রাখা পরিত্যাগ করে থাকেন৷ অথচ বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন রোগের ওপর রোজার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে লব্ধ ফলাফল যা পেয়েছেন তা প্রচলিত ধারণার বিপরীত৷

রোজা নিয়ে গবেষণা করে গবেষণা লব্ধ ফলাফল নিম্নরূপ:

এক. রোজা ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) শক্তিশালী করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷

পরামর্শ: অটোইমিউন ডিজিজ ও ইমিউন ডেফিশিয়েন্সি স্টেটে রোজা রাখা৷

দুই. Obesity বা স্থূলতাজনিত ভয়াবহ রোগসমূহ থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে রোজার ভূমিকা অপরিসীম৷     

স্থূলতা সংক্রান্ত রোগ সমূহ:
(ক) মেটাবোলিক সিন্ড্রোম, ডায়াবেটিস মেলাইটাস, হৃদযন্ত্রের রক্তনালির রোগ, উচ্চ রক্ত চাপ, স্ট্রোক প্রভৃতি৷

(খ) ফ্যাটি লিভার, স্টেয়াটোহেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস৷

(গ) হাইপারভেন্টিলেশন সিন্ড্রোম, স্লিপ অ্যাপ্নিয়া।

(ঘ) অস্টেওআর্থ্রাইটিস, ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স, ভ্যারিকোজ ভেইন।

(ঙ) ব্রেস্ট ক্যান্সার, জরায়ূ ক্যান্সার, পলিসিস্টিক ওভরি সিন্ড্রোম।

(চ) গলস্টোন ডিজিজ, পায়ূপথের ক্যান্সার, স্কিন ইনফেকশন প্রভৃতি৷

পরামর্শ: হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, ঘুমের মাঝে গোঙ্গানো, শ্বাস বন্ধ ভাব, হাটু মাজা ব্যথা, বন্ধ্যাত্ব, ব্রেস্ট ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, পায়ূপথে ক্যান্সার, পিত্তপাথরি, বিষন্নতা ও চর্মরোগ প্রভৃতির  চিকিৎসায় রোজাকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে৷

তিন. রোজা কিডনিতে পাথর তৈরি প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করে৷ কারণ, রোজায় পানাহার থেকে বিরত থাকার দ্বারা হাইপোভলিউমিক হাইপার ন্যাট্রেমিয়া হয়৷ আর রক্তে সোডিয়ামের তুলনামূলক আধিক্য ক্যালসিয়ামের কৃস্টালাইজেশনে বাধা দেয়৷ ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি প্রক্রিয়া প্রতিহত হয়৷

চার. রোজা Aging process বিলম্বিত করার মাধ্যমে বার্ধক্যের ছাপ প্রতিহত করে৷ মেটাবলিক টক্সিন বা বিপাকীয় বিষক্রিয়া থেকে দেহকে রক্ষা করার মাধ্যমে ত্বকের লাবণ্য ও দেহের তারুণ্য বজায় রাখে৷

পাঁচ. রোজা সেক্সুয়াল ডিজায়ার বা জৈবিক ইচ্ছার তীব্রতাকে প্রশমিত করে৷ ফলে নৈতিক অবক্ষয় থেকে সমাজকে পবিত্র রাখে৷

ছয়. রোজা Infertility বা বন্ধ্যাত্ব প্রতিহত করে নারী পুরুষ উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷

পরামর্শ: যারা কনসীভ করেন না, বা করলেও বারবার এ্যবর্শন হয়ে যায় তারা সন্তানের জন্য দিনে রোজা রেখে রাতে আল্লাহর কাছে চাইলে সুনিশ্চিত ফলাফল আশা করা যায়৷

সাত. রোজা কিছু কিছু Peripheral vascular disease ও Vasculitis যেমন ‘রেইনডস ডিজিজ’ এর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷ (JIMA, vol.23: 163-164)

(‘রেইনডস ডিজিজ’ রক্ত নালিকার প্রদাহজনিত এক ধরনের রোগ, যেখানে ঠান্ডার স্পর্শে হাতের আঙ্গুলের রঙ বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কখনো নখ শুকিয়ে আঙ্গুলে পচন ধরে৷)

আট. Continual (Medical) fasting বা অনবরত পানাহার থেকে বিরত থাকা Chronic rheumatoid arthritis (এক ধরনের বাত জাতীয় রোগ, যাতে হাত পায়ের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়) এর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷  
(Annals of Rheumatic Disease,42)

নয়. উপযুক্ত ঔষধ সেবন সহ Islamic fasting বা রোজা Chronic Peptic Ulcer Disease বা গ্যাস্ট্রিক আলসার এর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷
(The Medicus, 1963)

দশ. এছাড়াও রোজার অন্যন্য উপকারিতার মধ্যে মেধাশক্তি ও স্মরনশক্তি বৃদ্ধি, Digestive ও Absorptive  বা হজম শক্তি বৃদ্ধি, Exocine ও Endocrine Glands এর শক্তি বৃদ্ধিৃসহ নিয়ন্ত্রিত মেটাবলিজম এর মাধ্যমে রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল এর সুসম মাত্রা বজায় রাখে৷ 

সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রোজা বা ফাস্টিং এর মাধ্যমে দেহে ‘অটোফ্যাজি’ নামক একটি প্রসেস সচল হয়, যাতে দেহের দুর্বল ও অসুস্থ কোষগুলো এবং কোষের বিপাকীয় বর্জ পদার্থগুলো  সুস্থ ও সবল কোষ দ্বারা ফ্যাগোসাইটোসিস এর মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয়৷ ফলে  দূরারোগ্য অটোইমিউন ডিজিজ, ক্যান্সার, স্থূলতাজনিত রোগ, কার্ডিও প্রটেক্শন, নিউরো প্রটেকশন ও অ্যান্টি এইজিং সহ নানা দিক থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়৷

উল্লেখ্য, ‘অটোফ্যাজি’ নামক প্রক্রিয়াটি  জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইউশিমিও ওশিনি আবিস্কার করে 2016 সালে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত হোন৷ এর পর থেকে জাপানসহ পশ্চিমা বিশ্বে সপ্তাহে দুই দিন ফাস্টিং বা রোজার প্রাক্টিস আরও বহু গুণ বেড়ে গেছে৷ 

অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আমাদের প্রফেট মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের এক মাস ফরজ রোজাসহ সপ্তাহে দুই দিন নফল রোজার আমল করার শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন এবং সুসাস্থ্যে রোজার ভূমিকা উল্লেখ করে দিয়েছেন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা রোজা রাখো, (তাহলে) সুস্থ থাকবে৷
(তাবারানী)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, রোজা (দেহের জন্য) ঢাল স্বরূপ৷
(বুখারী) 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক জিনিসেরই একটি যাকাত রয়েছে, আর দেহের যাকাত হচ্ছে রোজা। (ইবনে মাজাহ)।
এখানে যাকাত শব্দের অর্থ হলো পিউরিফিকেশন বা বিশুদ্ধিকরণ৷

আরও পড়ুন

একটি জাল ভোট…
২০২৩ হোক দেশের…
জাতীয় শোকদিবসে রোটারি…
পদ্মা সেতুতে যান…
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন…
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে…
আজ দ্বিতীয় ধাপের…
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ…
অতি জরুরি’ ভিত্তিতে…

যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে ফাইজারের…

করোনা থেকে সুস্থ এক…

করোনা সংক্রমণে বিশ্বে ১৫তম…

বিশ্বে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের…

চীনে করোনার প্রথম ভ্যাকসিনের…