ডেস্ক রিপোর্ট , সকালের কন্ঠঃ
ফাতিমা কানাডার সংসদের বিরুদ্ধে প্রায় একাই লড়ে বিজয়ী হওয়া ঈমানোদ্দীপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কিশোরীর নাম।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন একে একে হিজাব ও নিকাব নিষিদ্ধ হচ্ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় কানাডাতেও কয়েকমাস আগে প্রকাশ্যে নিকাব নিষিদ্ধ করে একটা আইন পাস হয়। যার নাম বিল-৬২।
এর আইন অনুযায়ী কানাডায় প্রকাশ্যে কেউ নিকাব পড়তে পারবে না।
ইউরোপবার্তা ফাতিমার জন্ম ও বেড়ে উঠা কানাডাতে হলেও অন্য আর দশটা মেয়ের মতো সে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতিকে বরণ করে নেয় নি।
বরং সে ইসলামী অনুশাসনকে আরও গভীরভাবে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে থাকে।
নিকাব পরেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করা সহ কানাডিয়ান মানুষের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাতে থাকে।
তার স্বপ্ন, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে স্কুলে শিক্ষকতা করবে, ছোট ছেলে-মেয়েদের দ্বীনের শিক্ষায় শিক্ষিত করবে।
কিন্তু তার স্বপ্নের পৃথিবীতে কালো মেঘ হিসেবে আবির্ভূত হয় নিকাব নিষিদ্ধ করা সেই কালো আইন, বিল-৬২।
এই বিল পাসের পর কানাডার বিপুল সংখ্যক হিজাবি নারী যখন অন্ধকার দেখছিল, তখনই আলোর ঝাণ্ডা হাতে লড়াইয়ে নেমে পরে কিশোরী ফাতিমা।
সে তার এক শুভাকাঙ্ক্ষীকে সাথে নিয়ে কানাডার আদালতে রিট করে।
আইনি লড়াইয়ের সাথে চলতে থাকে বিল-৬২ এর বিপক্ষে জনমত গঠন।
লক্ষ্য পূরণের জন্য ফাতিমা তার কয়েকজন মুসলিম বান্ধবীকে নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে অনেক বাঁধা ও উসকানি সহ্য করেও নিকাব পরেই তার সব কার্যক্রম চালাতে থাকে।
কানাডার প্রথম সারির টিভি চ্যানেলগুলিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে জনমত গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে।
তার হিজাবি জীবন নিয়ে একটা ডকুমেন্টারিও প্রচার হয় একটা চ্যানেলে।
দীর্ঘ এক অসম লড়াই শেষে গতকাল সেই ঐতিহাসিক দিনটির সূর্য যেন নতুন আলোর বারতা নিয়ে উদিত হয়েছে।
কানাডার আদালত নিকাব নিষিদ্ধ করা সেই কালো আইন বিল-৬২ বাতিল করে দিয়েছে। ফাতিমা আজ বিজয়ী হয়েছে।
এই বিজয় শুধু তার নয়, এই বিজয় পুরা মুসলিম উম্মাহর, এই বিজয়ের গর্ব ১২ হাজার কিলোমিটার দূরের একজন মুসলিম হিসেবে আমাদেরও স্পর্শ করেছে।
ফাতিমার এই সংগ্রাম আমাদের শিক্ষা দেয় শত প্রতিকূলতার মাঝেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার।
তার বিজয় তো আমাদের সেই বাণীর কথাই মনে করিয়ে দেয়- “তোমরা হতাশ হয়ো না, মনমরা হয়ো না।
তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।
শ্রীলংকায় পদত্যাগে বাধ্য করা হল মুসলিম মন্ত্রীদের
শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ৯ মন্ত্রী।
একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন দুই মুসলিম রাজ্যপালও।
মুসলিম মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে দেশটির প্রভাবশালী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আথুরালিয়ে রাথানার আমরণ অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পদত্যাগ করেন মন্ত্রীরা।
মুসলিম মন্ত্রীদের গণপদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র রাজনীতিকসহ উদারমনা অনেকেই নিন্দা জানিয়েছেন।
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর সাম্প্রদায়িক দাবি নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
শ্রীলঙ্কায় মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ। এর মাত্র ৯ শতাংশ মুসলিম।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারত মহাসাগরীয় দেশটির তিনটি চার্চ ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে ২৫৩ জন নিহত ও কয়েকশ’ আহত হন।
এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।
স্থানীয় মুসলিমদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে।
মুসলিমদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ- মাদ্রাসা ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতে থাকে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা।
এরই মধ্যে দুই প্রাদেশিক গভর্নর ও এক মন্ত্রী- সিনিয়র তিন মুসলিম কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে ভক্তদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন একাধারে প্রভাবশালী সন্ন্যাসী, পার্লামেন্টের এমপি ও প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার উপদেষ্টা আথুরালিয়ে রাথানা।
ঘোষণা দেন, প্রেসিডেন্ট ওই তিন কর্মকর্তাকে না সরানো পর্যন্ত আমরণ অনশন করবেন তিনি।
সন্ন্যাসী ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলাকারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেন।
তার সমর্থনে রাজধানী কলম্বো ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভও হয়।
দিনচারেক আগে মন্ত্রিসভার সংখ্যালঘু সদস্যদের সরানোর দাবিতে প্রবল বিক্ষোভও হয়।
অভিযোগ ওঠে, শ্রীলংকার আঞ্চলিক ইসলামিক সংগঠন ন্যাশনাল তৈহিদ জামাতের সঙ্গে তিন মন্ত্রীর যোগাযোগ রয়েছে।
সন্ন্যাসীর চার দিনের অনশনের মাথায় মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট।
এরপরই অনশন ভঙ্গ করেন ওই সন্ন্যাসী।
মন্ত্রিসভার অন্য ৮ জন মুসলিম মন্ত্রীকে টার্গেট না করলেও অন্য তিন কর্মকর্তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সোমবার একযোগে ইস্তফা দেন মন্ত্রীরা।
সংখ্যালঘু মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, সিআইডি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা মন্ত্রিসভায় ফিরবেন না।
নভেম্বরে শুরু হতে পারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
১৫ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এই নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহিন্দা দেশাপ্রিয়া।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।