ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়ে। যাদের জেতার কথা জিতে চলেছে তারাই। এবং জেতার ব্যবধানও বিস্তর। কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, উত্তাপের ঝাঁজ নেই। মাঠে নেই উৎসবের কলরোল। বিশ্বকাপ নাকি প্রস্তুতিমূলক কোন টুর্নামেন্ট, অনেকের মনেই সেই প্রশ্নের জোগাড়। তবে বাংলাদেশ নামতেই যেন সব বদলে গেল। ভরপুর গ্যালারি মাত করে সমর্থকরা নাচলেন, খেলোয়াড়রা নাচালেন। চার-ছক্কায় ভাসালেন। পরে বল হাতে দেখালেন খেল। র‍্যাঙ্কিং, শক্তি সব বিচারে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা তাতে ভেসে গেল। মাশরাফি মর্তুজার দল রোমাঞ্চকর জয়ে বার্তা দিয়ে শুরু করল বিশ্বকাপ।

বিজ্ঞাপন

ওভালে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ২১ রানে। আগে ব্যাট করে ৩৩০ রান করে প্রোটিয়াদের থামিয়েছে ৩০৯ রানে। এই খবর পাঠক হয়ত খেলা দেখে জেনেই গেছেন। তবে কেবল ম্যাচ জেতা নয় বাংলাদেশের অর্জন যে আছে আরও।

ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ হেরে প্রোটিয়ারা বেশ চাপে ছিল বটে। চাপে থাকলে তাদের ভেঙে পড়ার নজিরও বহু। তবু দক্ষিণ আফ্রিকা বলে কথা। সবচেয়ে বড় কথা গড়পড়তা তিনশো রান করতেই যে দলের হ্যাপা পোহাতে হয় সেই বাংলাদেশ নেমেই একদম অনায়াসে করে ফেলল ৩৩০ রান। বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডেতে নিজেদের রেকর্ড সংগ্রহ। তাও আবার এত বড় সংগ্রহ পেতে কারো সেঞ্চুরি করতে হয়নি। ব্যাটিংয়ে এসেছে সম্মিলিত প্রয়াস, বোলিংয়েও তাই। ফিল্ডিংয়ে শরীরী ভাষায় তাই দেখে মিলেছে আগুন।

ওভালে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করে তিনশো ছাড়িয়ে আফ্রিকানদের দাঁড়াতে দেয়নি। বাংলাদেশ অমন করতে পারবে না ধরে নিয়েই হয়ত মাশরাফিদের ব্যাট করতে দিয়েছিলেন ফাফ ডু প্লেসি। বাংলাদেশও উইকেটের ভাষা পড়ে নিয়েছিল খুব ভালো করে। আগের দিন অধিনায়ক মাশরাফি বলছিলেন, ইংল্যান্ডের মাঠে শুরুর দিকে উইকেট হারানো চলবে না। উইকেট জমিয়ে রাখলে মাঝের ওভার থেকে পুষিয়ে দেওয়া যাবে, শেষে তোলা যাবে ঝড়। সেই ছক মতই খেলেছে বাংলাদেশ।

তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার শুরুতেই তাই তেড়েফুঁড়ে মারতে যাননি। প্রথম ৫ ওভার আফ্রিকান গোলা হজম করেছেন। পাওয়ার প্লের পরের পাওয়ার প্লেতে বাও বুঝে উত্তাল হয়ে উঠে সৌম্যের ব্যাট। কোথায় যেতে হবে, বাংলাদেশ তখনই বুঝে ফেলে সেই পথ।

তামিম বেশিক্ষণ টেকেননি, সৌম্য ৩০ বলে ৪২ রানের ঝড় তুলে থেমেছেন। তবু তাদের অ্যাপ্রোচ বাকিদের দিয়েছে বিশ্বাস। সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম সেই বিশ্বাসের জোরেই সাবলিল ছিলেন সারাক্ষণ। ১৪১ বলে রেকর্ড ১৪২ রানের জুটিতে গড়েছেন ভিত। সাকিব ৮৪ বলে ৭৫ রানে না থামলে আরও বড় কিছু হতেই পারত। মুশফিক ৮০ বলে ৭৮ রানে না থামলেও হয়ত আরও রান আসত। তবে সেসব সরিয়ে রেখে দেখুন। শেষটায় যেমন দরকার ঠিক তেমনটাই তো আঁচড় টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মোসাদ্দেক হোসেন। তাদের দুজনের ব্যাটে শেষ ১০ ওভারে ৮৬, শেষ ৫ ওভারে ৫৪ এসেছে।

শুরুর সুর আর শেষের ঝড়ে বাংলাদেশ যে মোমেন্টাম পেয়েছে বোলিংয়ে খারাপ কিছু হওয়া ছিল অস্বাভাবিক। উইকেটে স্পিন গ্রিপ করেছে, স্পিন গ্রিপ করলে মোস্তাফিজুর রহমানের বলও গ্রিপ করে। বিশ্বকাপে রান তাড়ার বিশ্বরেকর্ড গড়তে গিয়ে তাই উড়ন্ত শুরু আনতে পারেনি আফ্রিকানরা।

বাংলাদেশ চেপে ধরেছে শুরু থেকেই। চেপে ধরে ফেলেছে উইকেট। ব্যাটিংয়ের মতো এখানে সবচেয়ে ক্ষীপ্রভাবে খেলায় মিশে ছিলেন সাকিব। বল হাতে নেওয়ার পর থেকেই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের নাবিশ্বাঃস তুলেছেন। জায়গা দেননি, এমনকি কখনো কখনো প্রান্ত বদলের পরিস্থিতিও ব্লক করে রেখেছিলেন। দুনিয়ার তাবৎ অলরাউন্ডারদের মধ্যে দ্রুততম হিসেবে পাঁচ হাজার রান আর আড়াইশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এমন দিনেই।

১০ ওভার বল করে ৫০ রানে ১ উইকেট সাকিবের। ভীষণরকম প্রভাব ফেলেছে ম্যাচে। দারুণ কিপটে বোলিংয়ে অবদান রেখেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে মাত্র ৪৪ রান দিয়ে তার শিকার সবচেয়ে দাবি ফাফ ডু প্লেসির উইকেট।

পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ সেদিনই বলছিলেন, চোট সেরে গেছে। মোস্তাফিজ যে সেরা ছন্দে আছেন, ফুরিয়ে যাননি মানুষকে সেই বার্তা দেবেন এই বিশ্বকাপে। সেটাই হয়েছে। ডেভিড মিলারকে খুব দরকারি সময়ে আউট করে ব্রেক থ্রো পাইয়েছেন, পরে নিয়েছেন ক্রিস মরিসের উইকেট, জেপি ডুমিনিকে ছেঁটেছেন বোল্ড করে। তার কাটার প্রায়ই ধন্দে ফেলেছে, কাবু করে রেখেছে প্রোটিয়াদের।

ফিটনেসের কারণে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। শুরুতে সাইফুদ্দিনও ছিলেন এলোমেলো। তবে বাকিসব ঠিকমতো চলায় এসব সংকট প্রকট হয়নি।

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অন্তত সেমিফাইনালে খেলতে চায়, এই হুঙ্কার যে অমূলক না প্রথম ম্যাচেই জানিয়ে দিতে পেরেছেন মাশরাফিরা। সমর্থকরা স্বপ্ন দেখছেন আরও বড়, বাংলাদেশ অধিনায়ক সেই উন্মাদনা টের পেয়ে সবাইকে রয়েসয়ে থাকতে বলেছিলেন, নিজেদের রেখেছিলেন আন্ডারডগ তকমায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই চলছিল প্রোটিয়াদের কাবু করার রণকৌশল। হয়ত চাপ সরিয়ে ফুরফুরে মেজাজে নামতে সেই কৌশলই কাজে দিল বাংলাদেশের।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাওয়া এই জয় বাংলাদেশকে দিল এমন এক জোশ তাতে দারুণ কিছুর প্রত্যাশা ভক্তরা করতেই পারেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ (তামিম ১৬, সৌম্য ৪২, সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭৮, মিঠুন ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৫; লুঙ্গি ০/৩৪, রাবাদা ০/৫৭, ফেলুকওয়ায়ো ২/৫২, মরিস ২/৭৩, মার্করাম ০/৩৮, তাহির ২/৫৭, ডুমিনি ০/১০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩০৯/৮ (ডি কক ২৩, মার্করাম ৪৫, দু প্লেসি ৬২, মিলার ৩৮, ডুসেন ৪১, ডুমিনি ৪৫, ফেলুকওয়ায়ো ৮, মরিস ১০, রাবাদা ১৩, তাহির ১০; মোস্তাফিজ ৩/৬৭, মিরাজ ১/৪৪, সাইফউদ্দিন ২/৫৭, সাকিব ১/৫০, মাশরাফি ০/৪৯, মোসাদ্দেক ০/৩৮)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।

আরও পড়ুন

একটি জাল ভোট…
২০২৩ হোক দেশের…
পদ্মা সেতুতে যান…
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন…
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে…
আজ দ্বিতীয় ধাপের…
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ…
অতি জরুরি’ ভিত্তিতে…
প্রায় ১৮ মাস…

যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে ফাইজারের…

করোনা থেকে সুস্থ এক…

করোনা সংক্রমণে বিশ্বে ১৫তম…

বিশ্বে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের…

চীনে করোনার প্রথম ভ্যাকসিনের…