আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এখনো স্থবির হয়ে রয়েছে। সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রয়েছে সেখানে। ফলে পৃথিবীর কাছে এক নিঃসঙ্গ দ্বীপে পরিণত হয়েছে ভূ-স্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীর।
গতকাল সোমবার ভারতের পার্লামেন্ট কাশ্মীরকে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারাটি বাতিল করে। এই ঘোষণার আগেই গত রোববার সন্ধ্যা থেকে কাশ্মীরের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা এখনো চলমান রয়েছে।
টেলিফোন নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা এখনো পুনঃসংযোগ করা হয়নি।
৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে কাশ্মীরে ব্যাপক প্রতিবাদ মিছিলের আশঙ্কা করা হয়েছিল। সেখানে সহিংসতা রুখতে কয়েক হাজার সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্থানীয় মানুষের প্রতিক্রিয়া কী তা এখনো জানা যায়নি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শ্রীনগরে তাদের প্রতিনিধি আমির পীরজাদা গতকাল সোমবার দিল্লিতে তার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। আমির বলেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন অংশে কী ঘটছে তা কেউ জানে না। আমরা কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। স্থানীয় মানুষ জানে না কী ঘটছে বা কী ঘটতে চলেছে।’
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী কাশ্মীরিরাও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এ কারণে অনেকে চিন্তিত এবং ভীত হয়ে পড়ছেন।
দিল্লিতে বসবাসকারী এক কাশ্মীরি ছাত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানান, তিনি তার পরিবারের খোঁজ নিতে স্থানীয় থানায়ও ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ রাজ্যের একাধিক শীর্ষনেতা গৃহবন্দী রয়েছেন। গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। উপত্যকার বেশ কিছু এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
প্রসঙ্গত, ভারতের বিরোধী দলগুলোর তুমুল আপত্তির মধ্যেই বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গতকাল সোমবার লোকসভার অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির আদেশে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা রদ করার কথা জানান। সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ বলেই ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীর এতদিন স্বায়ত্ত্বশাসনের বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছিল।
তবে মোদি সরকার তা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির পাশাপাশি ‘জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল’ নামে নতুন একটি প্রস্তাব পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছে। ফলে জম্মু-কাশ্মীর যে শুধু বিশেষ মর্যাদা হারাল তাই নয়, রাজ্যের স্বীকৃতিও এখন হারনোর পথে।
সরকারের আনা বিলটি পাস হলে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত দুইটি আলাদা অঞ্চল হবে। জম্মু ও কাশ্মীরে আইনসভা থাকবে, তবে লাদাখে তা থাকবে না।
ভারতের পার্লামেন্টেও সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা হয়েছে এবং দেশটির কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ একে সংবিধানের ওপর আক্রমণ বলেও বর্ণনা করেছেন।