প্রয়াত অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

ফিচার ডেস্কঃ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের ৭৯ তম জন্মদিন দিন। ১৯৩৯ সালের আজকের এই দিনে ঝিনাইদহে বাবার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রয়াত অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম।

১৯৮৪ সালে সোয়া লাখ টাকা বেতনের চাকরী, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সম্মানের লেভেলটা বুঝতে পেরেছেন তো ?
এই চাকরী অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে এই দেশে চলে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন #চট্টগ্রাম_বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে, মাত্র হাজার তিনেক টাকার চাকরীতে। ভাবতে পেরেছেন তো ?
কেন ফিরে এসেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি একটা কথাই বলেন, আমি নিজ দেশকে ভালোবাসি, এ জন্য এখানে চলে এসেছি।
স্টিফেন হকিং, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন। যার চরিত্রের উপর তৈরি করা সিনেমা থিওরি অব এভ্রিথিং সমগ্র বিশ্বে সাড়া ফেলেছে। এই মানুষটা ছিলেন ছাত্রজীবনে স্টিফেন হকিং এর বন্ধু আর রুমমেট!

জামাল নজরুল ইসলামের স্কুলজীবন শুরু হয় কলকাতায়, সেখান থেকে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন, শেষে পাকিস্তানের লরেন্স কলেজ থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন।

বিএসসি সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে। এরপর বৃত্তি নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে ট্রাইপজে তিন বছরের কোর্স দুই বছরে শেষ করেন। ১৯৬০ সালে কেমব্রিজ থেকেই মাস্টার্স। ১৯৬৪ সালে এখান থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর ড. ইসলাম অত্যন্ত দুর্লভ ও সম্মানজনক ডক্টর অব সায়েন্স বা ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ছাত্রজীবনে তার সমসাময়িক ও আজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বিস্ময়কর বিজ্ঞান-প্রতিভা স্টিফেন হকিং।

সিনিয়র কেমব্রিজ (বর্তমানের ‘ও’ লেভেল) পড়ার সময়েই গণিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন ড. জামাল নজরুল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের একজন শিক্ষককে তিনি নিজের প্রিয় শিক্ষক তিনি নিজের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই শিক্ষকের নাম ‘ফাদার গোরে’। গণিতের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজে বুঝিয়ে দিতেন বলেই জামাল নজরুল ইসলাম তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। গোরে তার কাছে গণিতের বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইতেন, ড. ইসলাম আগ্রহভরে তা শেয়ার করতেন।

গোরের সঙ্গে ড. ইসলামের এই সম্পর্কের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, গণিতকে এমনিতেই অনেকে ভয় পেত। কিন্তু এটির প্রতিই ছিল আমার অসীম আগ্রহ ও ঝোঁক। এ কারণেই বোধয় তিনি আমাকে পছন্দ করতেন।

ড. জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল ফেলো ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে গবেষণা করেছেন।

১৯৭১-৭২ দুই বছর ক্যালটেক বা ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৭৩-৭৪ সালে লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের শিক্ষক, ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মনে সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন।

এর মধ্যে জামাল নজরুল ইসলামের অনেক গবেষণা নিবন্ধ বিখ্যাত সব বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং ১৯৮৩ সালে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বের জোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়।

দ্রুত বইটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়। পরের বছর কেমব্রিজ থেকেই প্রকাশিত হয় ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’। তার গবেষণা আইনস্টাইন-পরবর্তী মহাবিশ্ব গবেষণায় বিরাট অবদান রেখেছে। তিনি এই ধারায় গবেষণা অব্যাহত রেখে পরবর্তীকালে লেখেন ‘ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স’ বা মহাবিশ্বের দূরবর্তী ভবিষ্যৎ।

১৯৭১-৭২ দুই বছর ক্যালটেক বা ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৭৩-৭৪ সালে লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের শিক্ষক, ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মনে সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন।

এর মধ্যে জামাল নজরুল ইসলামের অনেক গবেষণা নিবন্ধ বিখ্যাত সব বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং ১৯৮৩ সালে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হলে সারা বিশ্বের জোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়।

দ্রুত বইটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়। পরের বছর কেমব্রিজ থেকেই প্রকাশিত হয় ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’। তার গবেষণা আইনস্টাইন-পরবর্তী মহাবিশ্ব গবেষণায় বিরাট অবদান রেখেছে। তিনি এই ধারায় গবেষণা অব্যাহত রেখে পরবর্তীকালে লেখেন ‘ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স’ বা মহাবিশ্বের দূরবর্তী ভবিষ্যৎ।

ড. ইসলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল অ্যান্ড ফিজিকাল সায়েন্সের গবেষক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  এর একজন সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন

অধ্যাপক জে. এন. ইসলামের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স ( ১৯৮৩), কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। ফরাসী, পর্তুগীজ, যুগোস্লাভ ও জাপানি ভাষায় অনুদিত।
ক্লাসিকাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)
রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪) , কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথেমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২) , কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
কৃষ্ণ-বিবর ( বাংলায়) – বাংলা একাডেমী হতে প্রকাশিত।
মাতৃভাষা, বিজ্ঞানচর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ – রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা।
শিক্ষা, সাহিত্য ও সমাজ – রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা।
স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ – কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত।
ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স – এনডেভার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত

পুরস্কার ও সম্মাননা: জে. এন. ইসলাম ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী কর্তৃক স্বর্ণপদকে ভুষিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পদক লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ইতালীর আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্সের থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমীর লেকচার পদক লাভ করেন।তিনি ২০০০ সালে মাহবুবউল্লাহ অ্যান্ড জেবুন্নেছা পদক পান। বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভুষিত করেন। ২০১০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন।

অধ্যাপক জে. এন. ইসলাম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, রয়াল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, কেমব্রিজ ফিলসফিকাল সোসাইটি, আব্দুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী এবং এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সম্মানিত সদস্য ছিলেন।

অধ্যাপক জে. এন. ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি বলা যায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর ম্যাথেমেটিক্যাল আ্যন্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস কেন্দ্রটি। সেখানে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের একটি আধুনিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী , আপেক্ষিকতত্ত্ববিদ এবং বিশ্বসৃষ্টিতাত্ত্বিকরা অনেক সময় কাটিয়ে গিয়েছেন এবং কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে জ্ঞানের আদানপ্রদান করে বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে জ্ঞানের ক্রমবর্ধমান পরিসীমা বৃদ্ধিতে অতি প্রয়োজনীয় অবদান রেখে গিয়েছেন।

সূত্র: ড. জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের লেখা কলাম, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের লেখা কলাম এবং বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে ছাপা হওয়া সংবাদ। 


(বিজ্ঞাপন)

আরও পড়ুন

একটি জাল ভোট…
২০২৩ হোক দেশের…
পদ্মা সেতুতে যান…
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন…
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে…
আজ দ্বিতীয় ধাপের…
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ…
অতি জরুরি’ ভিত্তিতে…
প্রায় ১৮ মাস…

যুক্তরাষ্ট্রের উপহার হিসেবে ফাইজারের…

করোনা থেকে সুস্থ এক…

করোনা সংক্রমণে বিশ্বে ১৫তম…

বিশ্বে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের…

চীনে করোনার প্রথম ভ্যাকসিনের…